

Jul 17, 2022


Oct 22, 2021


Sep 15, 2021


Aug 13, 2021


Aug 2, 2021
Written by Mahee Anan Nur
আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ময়মনসিংহে। জীবনের ১৪টা বছর কেটেছে ময়মনসিংহে। বলা চলে শৈশবের পুরোটা আর কৈশরের শুরু দিকের কয়েক বছর কেটেছে ময়মনসিংহে। এরপর মায়ের চাকুরির বদলির জন্য সপরিবারে চলে আসতে হয়েছে ঢাকায়। তবে যেহেতু শৈশবের পুরোটাই কেটেছে ময়মনসিংহে তাই প্রিয় জেলার “must try” আইটেমগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করাই যায়। সময়ের পরিক্রমায় ঢাকা বিভাগের জেলা থেকে ময়মনসিংহ এখন স্বতন্ত্র বিভাগ। গড়ে উঠেছে অনেক রেস্টুরেন্ট। পরিবর্তন এসেছে মানুষের রুচিতেও আর বিভিন্ন আধুনিক রেস্টুরেন্টের মেনুর দাপটে হারাতে বসেছে এসব আইটেমের জনপ্রিয়তা। তবে এখনো শহরের প্রবীণ ও আমার মতো ৯০দশকের ছেলেমেয়েদের নস্টালজিয়া করে তুলতে এই আইটেমগুলো অবদান রাখে। কোন একসময় ভোজনরসিক, সৌখিন মানুষের রসনার চাহিদা মিটিয়ে গিয়েছে এই রেস্টুরেন্টগুলো। কিছু কিছু আইটেমের খ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে আর কিছু কিছু আইটেম জেলায় বিখ্যাত।
আর তাই আজ এসব “must try” আইটেমগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
মিষ্টিপ্রেমীদের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় নাম লালমোহন। আর ময়মনসিংহের গাঙিনাপারে অবস্থিত দয়াময় মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের লালমোহন এর খ্যাতি সারা জেলা জুড়ে। তাই ময়মনসিংহে কেউ প্রথমবারের মতো এলে তার জন্য এই মিষ্টি অবশ্যি টেস্ট করে দেখা উচিত। জিলাপির মতো দেখতে আমিত্তি পিঠাও ময়মনসিনহে বেশ জনপ্রিয়। বলা বাহুল্য, এই মিষ্টি তৈরিতেও শহরে বিখ্যাত দয়াময় মিষ্টান্ন ভাণ্ডার।
ঘরে তৈরি গরুর বিশুদ্ধ দুধের সন্দেশ কার না ভালো লাগে। সে চিন্তা করেই ময়মনসিংহের সারথী তালুকদার নিয়ে এসেছেন সেজোমা’র রান্নাঘর যেখানে তৈরি হয় মায়ের হাতে তৈরি দুধের সন্দেশ, নারিকেল নাড়ু সহ আরোও মুখরোচক নানান আইটেম। বর্তমানে কোন সরাসরি দোকান না থাকলেও তারা ফোন কলের মাধ্যমে অর্ডার গ্রহন করে থাকে।
মিষ্টি জগতের আরেক বিখ্যাত সদস্য মালাইকারি। এর জনক সুধীর ঘোষ নিজ দোকান “সুধীর ঘোষ এন্ড সন্স” এ এই মিষ্টি চালু করলেও ক্রমান্বয়ে কৃষ্ণা কেবিন সেই জায়গা দখল করে নেয়। ময়মনসিংহের স্টেশন রোডের কৃষ্ণা কেবিনের মালাইকরি ময়মনসিনহ এর অন্যতম জনপ্রিয় খাবারের একটি।
শহরের স্বদেশি বাজারে অবস্থিত আদি রাজু ঘোষ বিখ্যাত হয়ে আছে তাদের মতিচুড়ের লাড্ডু এবং সিংগারা, সমুচা ও আলুর চপ ও পিঁয়াজু এর জন্য। তবে এখানের সিংগারা, সমুচা ও আলুর চপ ও পিঁয়াজুর বিশেষত্ব হলো এগুলো নরমাল সিংগারা, সমুচা ও আলুর চপ ও পিঁয়াজু থেকে সাইজে ছোট হয়। ময়মনসিনহের অনেক প্রবীণ ও মধ্যবয়স্ক লোকের শৈশব কেটেছে আদি রাজু ঘোষের খাবার খেয়ে।
সুধীর ঘোষ ময়মনসিংহে মালাইকারি নিয়ে এলেও ক্রমান্বয়ে কৃষ্ণা কেবিনের জনপ্রিয়তার কাছে হারিয়ে যায়। কিন্ত তাদের আরেকটি আইটেম এলাচি রসগোল্লা এখনো বিখ্যাত শহরে। এর বিশেষত্ব হলো রসগোল্লার ভিতরে একটি ছোট এলাচি থাকে। সুধীর ঘোষ শহরের স্বদেশি বাজারে অবস্থিত।
শহরের প্রাণকেন্দ্র চড়পাড়ায় অবস্থিত ময়মসিনহের বিখ্যাত বেকারি দোকান রুমা ও ওমর কনফেকশনারি। কোন এক সময় শহরে বেকারি ব্যাবসায়ে একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রেখেছিলো এই দুইটি বেকারি। জন্মদিনের কেক মানেই ছিলো রুমা কিংবা ওমর বেকারির কেক। সময়ের পরিক্রমায় শহরে আরোও ভালো বেকারি চলে আসায় আর নিজেদের কেকের ফ্লেভার আর টেস্টে পরিবর্তন না আনায় কেক বিজনেসে পিছিয়ে পরে তারা। কিন্ত কিছু ইউনিক বেকারি আইটেম যেমন ছোট ছোট বিস্কুট, বেকারি চানাচুর, চিনি টোস্ট ইত্যাদি আইটেমের জন্য এখনো বেশ দাপট এদের।
বিখ্যাত বালিশ মিষ্টি নেত্রকোণা অঞ্চলের বিখ্যাত হলেও একই বিভাগীয় শহর হওয়াতে ময়মনসিনহেও বেশ জনপ্রিয়। এই মিষ্টির বিশেষত্ব এই মিষ্টিগুলো সাইযে বেশ বড় হয়। হাতের তালুর সমান একেকটি মিষ্টি পাওয়া যায় শহরের স্বদেশি বাজারে অবস্থিত লাজিজ সুইট্মিটে। এছাড়া তাদের ইলিশ পেটি সন্দেশ বেশ জনপ্রিয় । এছাড়া বর্তমানে তারা লঞ্চ করেছে ৯৯টাকা ও ৬০টাকা প্ল্যাটার যা বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়।
ময়মনসিনহে বিরিয়ানি ও কাটলেট এর পথিকৃত হলো প্রেসক্লাব। মূলত ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব এর ক্যান্টিনের খাবার এই দুইটি আইটেম। শহরে আরোও দুইটি বিরিয়ানির দোকান সারিন্দা ও ধানসিঁড়ি যাত্রা শুরুর আগ পর্যন্ত বেশ জনপ্রিয় ছিলো এই দোকানটি। বর্তমানে এই দূর্মূল্যের বাজারেও ৮০টাকায় হাফপ্লেট ও ১৩০টাকায় ফুলপ্লেট বিরিয়ানি পাওয়া যায় এখানে। উল্লেখ্য এখানে মূলত চিকেন বিরিয়ানি বিক্রি হয়। এছাড়াও প্রেসক্লাবের ক্যান্টিনের কাটলেট তো এই প্রেসক্লাব ক্যান্টিনের অন্যতম সিগনেচার আইটেম।
জাতীয় দলের ক্রিকেটার ও টি-টোয়েন্টি টিমের ক্যাপ্টেন মাহমুদুল্লাহ রিয়ায়দের শৈশব স্মৃতি বিজড়িত শহরের সার্কিট হাউজ মাঠের ব্যাট-বল চত্বরের সামনে অবস্থিত দিদির নাস্তাঘর বর্তমান সময়ে বেশ জনপ্রিয়। ২০-৪০ টাকার মাঝে সবজি, আলুর দম, মুরগির মাংস, আলুর দম কিংবা ডিমের তরকারি দিয়ে লুচি পাওয়া যাবে এখানে। দাম নির্ভর করবে আপনি কি কি খাবেন তার উপর।
এছাড়াও শহরে বর্তমানে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে অবস্থিত দামোদর শেঠের চিকেন চাপ, সারিন্দা রেস্টুরেন্টের হায়দেরাবাদী বিরিয়ানি, ধানসিঁড়ি ও খন্দকার রেস্টুরেন্টের চিকেন বিরিয়ানি ও ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জব্বারের মোড়ে অবস্থিত জব্বারের মোড়ের ভর্তাভাজিও বেশ জনপ্রিয়।
লাজিজ সুইটমিটের ৬০ ও ৯৯টাকার প্ল্যাটার বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়। ৬০টাকার প্ল্যাটারে আছে ২ পিস লুচি, পাঁপড়, চিংড়ি চাটনি, আলুর দম, ছোলা ও লাজিজ স্পেশাল পায়েস। ৯৯টাকা প্ল্যাটারে আছে ভাত, সোয়াবিন কারি, নিরামিষ সবজি, বেগুনভাজি,কালোজিরা ভর্তা, আলুভর্তা, ডালভর্তা, শুটকি ভর্তা, পাতলা ডাল, বড়ই চাটনি ও লাজিজ স্পেশাল মিষ্টি।
Komentarze